২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় অর্জনের কারণ কি?
মূল কারণ: সরকারের প্রণোদনা। মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন:
১| ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার (বাংলাদেশ ব্যাংক) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২% হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
২| অর্থাৎ, ১ জুলাই, ২০১৯ থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে অতিরিক্ত ২ টাকা প্রণোদনা/বোনাস পাচ্ছে। ১ লক্ষ টাকায় ২ হাজার টাকা বোনাস!
৩| ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলো।
সরকার কেনো এ উদ্যোগ গ্রহণ করে:
সহজ কথায়, পূর্বে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ বিদেশ থেকে আসলে খরচ বেশি হতো এবং জবাবদিহিতা করতে হতো!
অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ১ টাকা চার্জ দিতে হতো। তার মানে আমার ভাই চীন থেকে ১ লক্ষ টাকা পাঠালে চার্জ বাবদ ১০০০ টাকা দিতে হতো! যার কারণে কেউ বিদেশ থেকে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতো না।
প্রশ্ন আসে টাকা তাহলে বিদেশ থেকে কিভাবে আসতো?
হুন্ডির মাধ্যমে আসতো। এর ফলে সরকার প্রচুর অর্থের লোকসানে পড়তো। অর্থাৎ সরকারের আয় হতো না ফলে রেমিট্যান্স আয় দেশের রিজার্ভেও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারতো না! প্রচুর রেমিট্যান্স আসার পরও।
আর এই কারণেই বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে গত অর্থ বছর থেকে বিদেশ থেকে টাকা আসলে উল্টো ১ টাকা চার্জের পরিবর্তে ২ টাকা করে বোনাস দেওয়া শুরু করে।
হুন্ডি কি?:
একদম সহজভাবে চিন্তা করুন: আমি আলাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থাকি, আবার ভাই হেলাল চীন থাকে।
(বুঝানোর প্রয়োজনে) - হেলাল ভাইয়ের সাথে করিম, রহিম নামের ২ জন বাংলাদেশি বসবাস করে। করিম ও রহিম বাংলাদেশে ২ লক্ষ টাকা পাঠাবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ২ লক্ষ টাকা বিপরীতে ২ হাজার টাকা চার্জ দিতে হবে, যেটা স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত খরচ মনে করে করিম ও রহিম।
এ জন্য করিম ও রহিম হেলাল ভাইয়ের কাছে আসলো। হেলাল ভাইয়ের কাছে করিম ও রহিম ২ লক্ষ টাকা দিলো, এবং হেলাল ভাই আমাকে কল দিয়ে বললো করিম ও রহিমের ২ লক্ষ টাকা আমি (হেলাল) পেয়েছি তুমি ৫০০/১০০০ টাকা চার্জ বাবদ ২ লক্ষ টাকা দিয়ে দাও।
আমি আলাল করিম ও রহিমের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলাম। অর্থাৎ সরকার পেতো এখান থেকে ২ হাজার টাকা কিন্তু আমাকে ৫০০\১০০০ টাকার বিনিময়ে করিম ও রহিমের পরিবার ২ লক্ষ টাকা পেয়ে গেলো!
আর হা, এটাই হুন্ডি! অর্থাৎ বৈধ পথে না এসে অবৈধ পথে লেনদেন।
সরকারের লসটা কোথায়?
দেখুন করিম ও রহিমের টাকা কিন্তু দেশে আসলো না, চীনে থেকে গেলো অর্থাৎ দেশে আর বিনিয়োগ হলো না।
ওই ২ লক্ষ টাকা কিন্তু হেলাল ভাই চীন বা অন্য কোনো দেশে বিনিয়োগ করে ফেললো। অর্থাৎ দেশের রিজার্ভ/বিনিয়োগে কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। আর এভাবে দেশের রাগব বোয়ালরা প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার করে ফেলে সহজে!
দুই শতাংশ প্রণোদনায় সরকারের লাভ হয়েছে কি?
তা লাভ হয়েছে বিরাট।
১| সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার (টাকায়: ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা) দেশে পাঠিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়!
২| সেই সঙ্গে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের (তিন হাজার ৬০০ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করে।
সুতরাং সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ যুগান্তরকারী বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
![]() |
| ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় অর্জনের কারণ কি? |


0 Comments